ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে এই মামলা করা হয়েছে। জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে চরভদ্রাসন থানায় এই মামলা করেন।
তিনি জানান, মামলায় শুধু নিক্সন চৌধুরীকেই একক আসামি করা হয়েছে। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি জেলা প্রশাসক অতুল সরকারকে হুমকি ও চরভদ্রাসনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন সুলতানা’র ফোনে কল করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে গালাগালি করার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলা দায়েরের আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া চলছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা চরভদ্রাসন থানায় গিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মামলাটি নথিভুক্ত হয়ে যাবে।
গত শনিবার (১০ অক্টোবর) চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের ডিসিকে ‘দাঁতভাঙা জবাব’ ও চরভদ্রাসনের ইউএনও’র ফোনে কল করে নির্বাচনের দায়িত্বপালনকারী একজন সহকারী কমিশনারকে গালাগালি করার অভিযোগ উঠেছে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এই দুই ঘটনার অডিও-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষ থেকে এই ঘটনার জন্য নিক্সন চৌধুরীর বিচার দাবি করা হয়। অবশ্য গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে নিক্সন চৌধুরী গালাগালির অভিযোগ অস্বীকার করে তার বক্তব্য ‘সুপার এডিট’ করে ছাড়া হয়েছে বলে দাবি করেন। সেই কণ্ঠ তার না।
বুধবার (১৪ অক্টোবর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা জানান, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সিইসি বলেন, ‘ফরিদপুর নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। সংসদ সদস্য নিক্সন সাহেবের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করবো। হয়তো আজকে বা কালকের মধ্যে থানায় মামলা হয়ে যাবে। আমাদের নির্বাচনবিধি বহির্ভূত আচরণের জন্য আমাদের কাছে যথেষ্ট আলামত আছে, সেজন্য মামলা হবে। থানা তদন্ত করে যেরকম পাবে, সেরকম আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি ভঙ্গের বাইরেও যদি কোনও অনিয়ম থেকে থাকে, সেগুলো নিয়ে আরেকটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
এর আগে মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘ওই ভয়েসটাই (কণ্ঠস্বর) আমার না। প্রথমে আমি এসিল্যান্ডকে (সহকারী কমিশনার, ভূমি) ফোন করেছিলাম। “আমি দেখতেছি”, বলে তিনি ফোনটা বন্ধ করে দেন। পরে আমি আপাকে (টিএনও) ফোন করলাম যে, “আপা আমার একটা লোক ধরা পড়ছে আপনি একটু দেখেন। সে কোনও অন্যায় করেনি, মাঠে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল। তাকে বিজিবি ধরে নিয়ে গেছে। আপনি একটু ব্যবস্থা নেন।” এই কথাটুকুই আমি তাকে বলেছি। বাকি কোনও কথা আমার না। এটা আপনি টিএনও সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেই পাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জিজ্ঞেস করেন, এই গালিগুলো আমি টিএনও’কে দিয়েছি কিনা। সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ করুন যে, এই ভয়েসটা আমার। এই ক্লিপগুলো একেক জায়গা থেকে কেটে নিয়ে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবর ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়।
সূত্র, বাংলাট্রিবিউন